আমাদের প্রতিনিধিঃ – সোহেল রায়হান,
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার ১ নং বলদিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড উড়িবুনিয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আবুয়াল তালুকদারের মেয়ে মোসাঃ নাজমা বেগম নয়ন (৩০) তার স্বামী মোঃ মাহমুদুল ইসলাম বুলবুল (৩৮) এর দ্বারা বেশ কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানসিক অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০১০/১১ সালে নাজমা বেগম নয়ন ও মাহমুদুল ইসলাম বুলবুল ঢাকাস্থ একটি গার্মেন্টসে চাকরি করা অবস্থায় তাদের দুজনের মাঝে ভালোবাসার আদান-প্রদান হয়। এক পর্যায়ে ২০১১ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং চাকরিরত অবস্থায় তারা সংসার করা শুরু করেন। সংসার জীবনের কিছুদিন পেরুতেই তাদের দুজনের মাঝে বিভিন্ন সাংসারিক কলহের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে স্বামীর মতামত নিয়ে নাজমা কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমান। সৌদি আরবে চাকরীর তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নাজমা বেগম নয়ন আবার দেশে ফিরে আসেন এবং স্বামী বুলবুলকে নিয়ে আবার নিজের সংসারে মনোযোগ দেন। কিন্তু তখন স্বামী বুলবুল কারণে অকারণে স্ত্রী নাজমা কে খারাপ বলেন এবং সকল কাজে তার দোষ ত্রুটি খুঁজে বেড়ান। সামান্য দোষ ত্রুটি পেলেই স্বামী বুলবুল তাকে মারধর করেন।
এ বিষয়ে নাজমা বলেন, আমি সৌদি থাকাকালীন বেতন পেয়ে যত টাকা পেতাম সবই আমার স্বামীর কাছে তার একাউন্টে পাঠিয়ে দিতাম। আমার কষ্টে উপার্জিত সেই টাকাগুলো এখনো পর্যন্ত আমাকে ফিরিয়ে দেননি এবং সম্পূর্ণ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছে। টাকা চাইলে তিনি বলেন, কিসের টাকা তোর কোন টাকা আমি খাইনি, তাছাড়া বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোকে মেরে গুম করে ফেলবো অথবা তোকে তালাক দিয়ে কাবিনের ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে চলে যাবো। তুই আমার কিছুই করতে পারবিনা।
আমার পাওনা টাকা চাইলে এবং এসব অমানবিক ব্যবহারের প্রতিবাদ করলে দীর্ঘদিন যাবৎ সে আমাকে বেধম মারধর করে ও বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকি প্রদান করে।
বর্তমানে আমি খুব অসহায় হয়ে তিনটি মাসুম বাচ্চা নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে বসবাস করছি। আমার স্বামী বুলবুল বেশ কয়েক মাস ধরে আমার কোলের তিনটি সন্তান সহ আমার বাবদ কোনো রকম ভরণপোষণ দেন না এবং গত ০৫/০৯/২০২৫ তারিখ বুলবুল আমার সাথে অহেতুক ঝগড়া সৃষ্টি করে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করে, আমাকে চেড়া বা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। এতে আমি গুরুতর আহত হই এবং বাড়ির আশপাশের লোকজন আমাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমাকে প্রানে বাঁচাতে এগিয়ে আসে এবং আমি প্রাণে বেঁচে যাই। পরবর্তীতে আমার স্বামী মাহমুদুল ইসলাম বুলবুল আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকি প্রদান করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন মেয়ের সাথে পরকীয়ায় আসক্ত রয়েছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে আছে।
এমতাবস্থায় আমি গত ০৬/০৯/২০২৫ তারিখ নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর আমার স্বামী মাহমুদুল ইসলাম বুলবুলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করি, যার অভিযোগ নাম্বার ১৭৩১/২৫।
এ বিষয়ে নাজমার স্বামী মাহমুদুল ইসলাম বুলবুলের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার স্ত্রী নাজমা বেগম নয়নের মাথায় একটু সমস্যা রয়েছে, সে অতিরিক্ত ও অবান্তর কথা বলে এবং সে অত্যান্ত সন্দেহপ্রবন। তাই মাঝে মাঝে কিছুটা রাগারাগি ও সাংসারিক কলহের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমি তাকে কখনো মারিনি এবং তার করা বিভিন্ন প্রকার নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া ও ভিত্তিহীন। আমি বর্তমানে চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে রয়েছি এবং বেশ ভালোভাবেই আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণ পোষণ দিয়ে যাচ্ছি। তারপরেও সে যদি আমার বিরুদ্ধে ভূয়া মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে আমাকে হয়রানি করতে চায় এবং ঝামেলা বাড়াতে চায় তাহলে সে করুক তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে নাজমা বেগম নয়ন সাংবাদিককে জানান, এখনো নাকি নাজমার স্বামী বুলবুল ফোন করে নাজমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকি প্রদান করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয় ও বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। নাজমা বেগম প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থার কাছে এর একটি সুষ্ঠু বিচার বা সমাধানের জোরালো দাবি জানিয়েছেন।